ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
( 42 তম পর্ব)
-----মজার ঘটনা মানে?ঠিক কি বলতে চাইছিস তুই?
------- একটু ধৈর্য ধরে শোনো, প্লিজ !
----ঠিক আছে বল,শুনছি।
-------অষ্টম দিন সকালে মামিমা হঠাৎ ঘোষণা করলো, স্বামী কৃষ্ণানন্দ নাকি বলেছেন যে,মামিমার গ্রহ-নক্ষত্রের দোষ সম্পূর্ণ কাটাতে গেলে আরো কিছুদিন তন্ত্র মতে আচার-অনুষ্ঠান করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণরূপে ফলবতী করতে হলে মামিমাকে দীক্ষা নিতে হবে। আর সেই দীক্ষা দেবেন স্বামী কৃষ্ণানন্দ স্বয়ং ।তবে হ্যাঁ, দীক্ষা দেওয়ার কাজ এই গৃহস্থবাড়িতে বসে সম্ভব নয় ।তার জন্য মামিমা কে আশ্রম এ যেতে হবে ।
সবটা শুনে বিশু মামা বলল ,অসম্ভব!এটা হতেই পারে না। নেহাত তোমার বাপের বাড়ির কুলগুরু অনুরোধ করলেন,তাই ওই তান্ত্রিক কৃষ্ণ নন্দ কে ঘরে আসতে অনুমতি দিয়েছিলাম ।উনি সাত দিন ধরে অনেক ক্রিয়াকর্ম করলেন।
------ তার জন্য একটি পয়সাও খরচ হয়নি তোমার। ক্রিয়াকর্ম হোম ইত্যাদি করার জন্য যে সমস্ত উপাচার প্রয়োজন ,সেগুলো তো স্বামীজি নিজে নিয়ে এসেছিলেন !
----আমি কি বলেছি যে আমি কোন টাকা পয়সা দেবনা ?আমি অবশ্যই দিয়ে দেব সব টাকা। আরেকটা কথা তুমি ওনাকে কৃষ্ণানন্দ বা স্বামী কৃষ্ণানন্দ ,যে নামেই ডাকো না কেন, আমার কোন আপত্তি নেই । তবে 'স্বামীজি'_ বলে ডাকলে আমি আপত্তি করব।vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
কারণ ,স্বামীজি বলতে আমি একজন কে জানি। তিনি সিমলার নরেন্দ্রনাথ দত্ত বা স্বামী বিবেকানন্দ ।
বিশু মামা তো তার বক্তব্য শুনিয়ে দিয়ে দোকানে বেরিয়ে গেল ।কিছুক্ষণ পরে স্বামী কৃষ্ণানন্দ ফিরে গেল তার আশ্রমে।আগে স্বামী কৃষ্ণ নন্দ কে সে ভাবে দেখিনি, কিন্তু উনি আশ্রমে ফিরে যাওয়ার জন্য চিলেকোঠার ঘর থেকে নেমে যখন নিচের উঠোন এলেন ,তখন ভালো করে দেখলাম ।
-----কি দেখলি?
___ স্বামী কৃষ্ণানন্দ সুপুরুষ। দীর্ঘদেহী, উন্নত নাসা ,আয়তলোচন, গৌর বর্ণ। ফর্সা গালে কুচকুচে কালো চাপ দাড়ি ।
----ও বাবা ,তুই তো মনে হয় স্বামী কৃষ্ণানন্দের রূপ দেখে ফিদা হয়ে গেছিস!
------ বাজে কথা একদম বলবে না পলাশদা !----------আহা, রাগ করছিস কেন? আমিতো মজা ....
হঠাৎ নন্দিনীর মুখের দিকে তাকাতেই পলাশ কথা শেষ না করে বলে ,সরি! আমি এরকম কথা আর কখনো বলবো না। আমাকে মাফ করে দে না,প্লিজ! vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
নন্দিনী কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে। ওর চোখ থেকে তখনো টপটপ করে ঝরে পড়ছিল অশ্রু মুক্তো।
পলাশ বুঝল ,সে একটা বড় ভুল করে ফেলেছে। নন্দিনী তার মা-ও মামার জন্য যথেষ্ট চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। সে তাই পলাশের উপরে নির্ভর করে সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য সবটা খুলে বলছিল তাকে ।এই সময়ে এই ধরনের মজার কথা তাই ওকে বিদ্ধ করেছে অন্তরে ।
এই সমস্যার সমাধান পলাশকেই করতে হবে।আর সেটা কোন হাসি-ঠাট্টা বা মজা দিয়ে হবে না। তা হতে হবে আন্তরিক। তাই সে চট করে নন্দিনীর চোখের জল মুছিয়ে দেবার জন্য ওকে নিজের দিকে টানতেই ,নন্দিনী চিৎকার করে উঠলো, না না, তুমি আমাকে একদম ছোঁবে না! -----আহা, আমার কথাটা শোন।
--- আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
---- বিশ্বাস কর নন্দিনী, আমি সত্যি বলছি ,আমি তোর সঙ্গে স্রেফ ঠাট্টা করেছিলাম ।
কথা শেষ করেই পলাশ সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নন্দিনীকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।তারপর ঠোঁট দিয়ে মুছিয়ে দেয় ওর চোখের জল। নন্দিনীর চোখের জলের নোনতা স্বাদ জিভে লাগতেই আরো জোরে নন্দিনীকে বুকের মধ্যে যেন পিষে দিতে চায় পলাশ ।
নন্দিনী তখনও ছটফট করছে।ও প্রানপনে চেষ্টা করছে পলাশের হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে ।
আর অপেক্ষা করে না পলাশ। চট করে নন্দিনীর অধর ঢুকিয়ে নেয় নিজের দুই পুরুষ্ট ঠোঁটের ফাঁকে।তারপর শুরু হয় সর্বগ্রাসী আদর। পলাশ যেন দুই ঠোঁট দিয়ে শুষে নেবে নন্দিনীর বুকে জমে থাকা সমস্ত অভিমান। সত্যিই তাই ।কিছুক্ষণের মধ্যেই নন্দিনীর প্রতিরোধ শিথিল হয়ে যায় ।
নিজেকে সম্পুর্ন সমর্পণ করে পলাশের হাতে। মহাকালের বুক থকে ঝরে পড়ে সময়ের পাপড়ি । একসময়ে শান্ত হয় পলাশ।
।হঠাৎ ধেয়ে আসা ' ঝড়ের পরে বৃষ্টি নামলে প্রকৃতি যেমন গর্ভিনী নারীর মত শান্ত হয়ে যায়, নন্দিনী তেমনি শান্ত ভাবে নন্দিনী গিয়ে বসে পড়ে ওর বিছানার উপরে। একটু সময় পরে উঠে অবিন্যস্ত পোশাক ঠিক করতে করতে বলে ,তুমি এখনো ডাকাত রয়ে গেছো পলাশদা।
---- ডাকাতি না করলে তোর মত অবুঝকে থামাতাম কি করে?
নন্দিনী জিভ ভেংচে বলে,ইস,কি আমার বীরপুরুষ!
(চলবে)
vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]