ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
(পর্ব--৪১)
------ জানতে চাইছি প্রকৃত সত্যটা ।তুই ,কাকিমা, তোর মামা, তোর মামীমা ---তোরা এখানে কবে এলি? কিভাবে এলি? আর আসার পরে তোর মামিমা কিভাবে এই আশ্রমের কর্তৃপক্ষের এত সুনজরে এল ?এ সমস্ত জানা আমার একান্ত দরকার।
---- দেখো, তোমাকে তো আগেই বলেছি যে, মা হতে পারেনি বলে মামিমার মনে একটা চাপা যন্ত্রণা ছিল ।তার উপরে পাড়া- প্রতিবেশীর কাছে নানা রকম কথা শুনতে হত মামিমাকে।গ্রামে কোন শুভ কাজে মামীমাকে ডাকা হতনা,মামীমা বাঁজা বলে।আর এই সমস্ত কারণে সন্তান লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল মামীমা।
বিভিন্ন মন্দিরে বা দেবস্থানে পুজো দেওয়া, হত্যে দেওয়া , নানারকম মানত করা-------- এসমস্ত তো চলছিল দীর্ঘদিন ধরে ।
এর সঙ্গে যুক্ত হল বাড়িতে তান্ত্রিক এনে হোম যজ্ঞ করে বাস্তু দোষ কাটানো, কুদৃষ্টি বা অপদেবতার কু প্রভাব কাটানো ইত্যাদি।vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন]
এই ব্যাপার গুলো মামিমার বাপের বাড়ি লোকজনরাও জানতেন মনে হয়।তাই বোধ হয় হঠাৎ একদিন মামীমার বাপের বাড়ি থেকে ওনাদের পরিবারের কুলগুরু দেখা করতে এলেন মামিমার সঙ্গে ।একথা সেকথার পর উনি মামীমাকে পরামর্শ দেন ,তন্ত্রসাধক স্বামী কৃষ্ণানন্দ কে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য ।স্বামী কৃষ্ণানন্দ নাকি উচ্চ মার্গের সাধক। তিনি বাড়িতে এসে বিভিন্ন তান্ত্রিক ক্রিয়া আচার ইত্যাদি করলে সমস্ত রকম দোষ কেটে যাবে। আর তাহলেই মা হতে পারবে মামীমা ।একথা শুনে মামীমা তার পিতৃকুলের কুলগুরুকে অনুরোধ জানাল,যেভাবে হোক স্বামী কৃষ্ণানন্দ কে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার জন্য ।মামীমা এটাও জানিয়েছিল যে, এই কাজে যত টাকা খরচা হয় মামীমা দেবে ।প্রয়োজনে নিজের সমস্ত গহনা বিক্রি করেও টাকা দেবে। কুলগুরু ভদ্রলোক মামীমাকে জানালেন যে ,স্বামী কৃষ্ণানন্দ এখন তার দাদা স্বামী সর্বানন্দের মহেশপুরের আশ্রম এ অবস্থান করছেন।
মহেশপুর আশ্রমের প্রধান , স্বামী সর্বানন্দ কুলগুরু ভদ্রলোকের বিশেষ পরিচিত। কাজেই স্বামী সর্বানন্দ কে অনুরোধ করে, তার ভাই কৃষ্ণানন্দ কে কুমারপুর এ মামা বাড়িতে নিয়ে আসতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলেই মনে হয় ।
উনি এটাও বলেছিলেন যে, স্বামী কৃষ্ণানন্দ তার মর্জি মাফিক চলেন। কাজেই এখানে এলে তিনি যে কতদিন থাকবেন সেটা বলা মুশকিল ।যদি বাড়ির পরিবেশ তার পছন্দ হয় ,তবে সমস্ত ক্রিয়াকর্ম শেষ করেই এখান থেকে যাবেন। তবে সাধারণত তিনি কোথাও দুদিনের বেশি থাকেন না। হ্যাঁ ,আরেকটা কথা,তিনি এখানে আসার পরে যতদিন থাকবেন, তার জন্য একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আলাদা ঘর দরকার। যাতে তার এখানে অবস্থানকালীন সাধন-ভজনের কোনরকম বিঘ্ন না ঘটে তার। vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন]
মামীমা সমস্ত শর্ত মেনে নিল।
---- তারপর স্বামী কৃষ্ণানন্দ কি তোর মামার বাড়িতে এসেছিলেন ?
----হ্যাঁ ।আর তখনই তো রোপিত হল আজকের ঘটনা প্রবাহের বীজ।
--- মানে?
---- কৃষ্ণানন্দের জন্য বাড়ির চিলেকোঠার ঘরটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হলো ।নতুন করে রং করানো হলো ।বেশ সুন্দর করে সাজানো হল ঘর।
----- স্বামী কৃষ্ণানন্দ এসেছিলেন?
-----শুধু এসেছিলেন বললে ভুল হবে!
---মানে? vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন]
----- এলেন এবং একটানা সাতদিন থাকলেন। ওই সাত দিন চিলেকোঠার ঘরে সকাল থেকে শুরু করে প্রায় পুরোটা দিন স্বামী কৃষ্ণানন্দ নাকি নানা রকম তান্ত্রিক ক্রিয়া কর্ম আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি করলেন , মামী মাকে সঙ্গে নিয়ে। দুই এক দিন তো হোমকুণ্ডে আগুন জ্বালিয়ে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত নাকি নানা রকম ক্রিয়া কর্ম করলেন স্বামী কৃষ্ণ নন্দ।
------ তারপর?
---- তারপরেই তো ঘটল মজার ঘটনা।
(চলবে)
vul station a neme [পূর্ববর্তী পর্বগুলি পড়ুন]
Tags
উপন্যাস
