নুপুরের ধ্বনি বাজে
শক্তি সামন্ত
প্রথম দিন অনেক রাত পর্যন্ত টিভি দেখে সবে শুয়েছি। ঘুমের তন্দ্রাটা লেগেছে।হঠাৎ ছম ছম করে কিছু একটা আওয়াজে চমকে উঠলাম। বাস যার্নির ক্লান্তি ছিল আবার ঘুমিয়ে পড়েছি।
পরদিনই কাজে যোগ দিলাম। খুব একটা মন পড়ছিল না।
রাতে আবার সেই নুপুরের শব্দ বুকের ভিতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। পাশে শুয়ে থাকা রবিকে ডাকলাম। ঘুমের ঘোরে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে রবি যা বলল ভয়ে আমার আর ঘুম আসছিল না কিছুতেই। শুধু থেকে থেকেই নুপুরের ধ্বনি বেজে উঠে।
পরদিন সঞ্জয় বলল,"আমোদ স্যারের পাশের খালি ঘরটা খালিই থাকে। ওখানে কোন এক ভারাটিয়া মহিলা আত্মহত্যা করেছিল। এমন নুপুরের আওয়াজ প্রায় শোনা যায়। অনেকেই নাকি অনেক রাতে এই দোতলা ঘরের ছাদে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে।"এইসব শুনে আমার নিশ্বাস ঘন হয়ে পড়ছিল। ভুতের ভয় একটু আধটু পেলেও এই সব বিষয়ে আমার সাহস অগাধ।পূর্বের কিছু ভৌতিক অভিজ্ঞতা ছিল, এতকাল যা হ্যালুসিনেসন বলে উড়িয়ে দিয়েছি।
বেশ কয়েকদিন এভাবেই কাটল। দুপুরে খেতে আসলেও কেমন যেন গা ছম,ছম করত।
বাগালকোট থেকে আরও ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গুলেদ গুড্ডা ছোট একটা শহর। গুলেদ গুড্ডা , বাংলা যার মানে হল পাহাড়ি ভুমি।যদিও আমরা সহজ করে গুলেজ কোট বলতাম। সত্যিই, এখান থেকে দাঁড়িয়ে দেখলে চার পাশে শুধুই পাহাড়। পাহাড় ঘেরা ছোট শহর। যে ঘরটায় ভাড়ায় থাকতাম খাঁড়ায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হত দারুণ বিরক্তিকর। একটা রোপ, ঘন ঘন গিঁট বাঁধা সেটা ধরে ব্যালেন্স সামলাতে হয় পাছে পড়ে না যায় ।
পেছনের দিকে একটা খাটাল ছিল। বেশ কয়েকটি মহিষ সেখানে । খাটালের মালিক স্ব পরিবারে থাকত। আমি ছাড়াও আরও কয়েকজন ছিলাম। পাশের ঘরে এক মাস্টার থাকত আমোদ স্যার ।
টিউশনি পড়াতেন আমোদ স্যার। [আরও পড়ুন ]
সেদিন একটু বৃষ্টি হয়েছে বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। ভাবলাম যা পারে হোক আমি ঘুমোই।
তাছাড়া ভুতপ্রেত বলে কিছুই হয় না।ঘুমিয়ে গেছি কতক্ষন হল বুঝতে পারিনি। কিসের আওয়াজে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেতে দেখলাম তখন প্রায় রাত দুটো বাজে। আবারও সেই আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। বুক ঢিব ঢিব করছে। এক দুর্নিবার কৌতুহলে মনটা উসখুস করছে। ব্যাপারটা জানতেই হয়। চাদর সরিয়ে উঠে বসলাম। ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলাম। আকাশে মেঘ জমে আছে কঠিন। বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক্ক্ষণ, মেঘের ফাঁকেই চাঁদ উঠেছে । দরজা অল্প করে খুলে দেখছিলাম চারপাশটা। না কোত্থাও কিছু নেই।কয়েকটা শুয়োর ড্রেনের আবর্জনায় খবার খুঁজছে ।অনেকক্ষন হয়ে গেছে। কিছুই দেখতে পেলাম না। দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুতে যাব আবার আওয়াজ।ভয়ে ভয়ে আবার দরজা খুললাম। যা দেখলাম অবাক হলাম না, তবে , সেই ভয়টা কেটে গিয়েছিল। কয়েকটা ঘর পরে যে অকাল বিধবা মঞ্জুলা তার বুড়ী মাকে নিয়ে থাকে,আমোদ স্যারের ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে। আর তার পায়ের ছম ছম আওয়াজটা বুকে এসে লাগছিল ভীষণ ।
পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতু এই পাখিটি, ছুঁলেই মারা যায় দেখুন ভিডিও
Tags
গল্প