ভুল স্টেশনে নেমে
সমীরণ সরকার
(৪৮ তম পর্ব)
দ্রুত কিন্তু সতর্ক পদক্ষেপে এগিয়ে চলে নন্দিনী! পলাশ অবাক হয়ে যায় ,নন্দিনীকে নিখুঁতভাবে এগিয়ে যেতে দেখে। গতকাল রাতেও তো জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এই ভাবেই বিনা দ্বিধায় এগিয়ে যাচ্ছিল নন্দিনী। মেয়েটা কি অন্ধকারে চোখে দেখতে পায় নাকি? পলাশ নিঃশব্দ অনুসরণ করে নন্দিনীকে। [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
মন্দিরের দক্ষিণ দিকে অনেকগুলো বড় বড় বিল্ডিং আছে ।নন্দিনী বলেছিল, ওগুলো নাকি অতিথি নিবাস। আসলে যখন কোন অনুষ্ঠান হয় তখন বাইরের ভক্তরা এসে ওখানে থাকে।
ওই বিল্ডিংগুলোর ঠিক পিছনে এসে দাঁড়াল নন্দিনী ।বিল্ডিং এর গা ঘেঁষে বেশ কয়েকটা বড় বড় গাছ। এগুলো কি গাছ? অন্ধকারে ঠিক ঠাওর করতে পারল না পলাশ।
নন্দিনী পলাশের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করল, এধার থেকে কি মন্দিরে ঢোকা সম্ভব ?
পলাশ ফিসফিস করে বলে ,আমাকে একটু দেখতে দে ভালো করে।
একটু সময় এদিক-ওদিক লক্ষ্য করার পরে পলাশ মৃদু স্বরে বলল ,দ্যাখ গাড়িটা এসেছে সম্ভবত মেয়েগুলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ।এখানে আশ্রমের নামে এই ধরনের ব্যবসা চলে এটা ক্লিয়ার ।কিন্তু তোর সেই 'হাওয়া মহলে' যে আর কি হয় সেটা জানা খুব দরকার।
তুই নিচে একটু দাঁড়া, আমি গাছের উপরে উঠে দেখি আশ্রমের ভিতরটা দেখা যায় কিনা। এগুলো কি গাছ বলতো?
------ এগুলোর কোনটাই ফলের গাছ নয় ।এখানে নিমগাছ ,শিশু গাছ,গামার গাছ ,শিরীষ গাছ ইত্যাদি আছে ।
-----ঠিক আছে ।তাহলে গাছে ওঠার ব্যাপারটা খুব একটা রিস্ক এর হবে না। [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
---- তুমি একা চাপবে নাকি গাছে?
---- তাছাড়া কি! তুই নিচে দাঁড়া।
---- দেখো ,এই এলাকার এই সমস্ত গাছ, বিল্ডিং গুলোর পজিশন আমার মুখস্থ ।কাজেই কোথায় উঠলে মন্দির চত্বরের ভেতরটা দেখা যাবে সেটা আমি জানি। কাজেই আমাকে তো উঠতেই হবে।
তুমি বরঞ্চ আমাকে ফলো করো।
------ বেশ যা ভাল বুঝিস কর ।তবে বারবার করে বলছি, খুব সাবধান কিন্ত ।কোনরকম শব্দ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখিস। ধরা পড়া চলবে না ।
----তুমি নিশ্চিন্তে থাকো! আমি নিঃশব্দে গাছে উঠতে পারি।
সত্যিই তাই। পলাশ অবাক হয়ে দেখে, হাত পাঁচেক দূরে সরে গিয়ে একটা গাছে ,বলতে গেলে, তরতর করে উঠে গেল নন্দিনী ।
ওকে ফলো করে পলাশ উঠলো সেই গাছটায়। বেশ কিছুটা ওঠার পরে একটা মোটা ডাল দেখে নন্দিনী সেখানে বসে পরলো।্
,, পাশে এসে বসল পলাশ।
নন্দিনী ফিসফিস করে বলল, ওই দেখো। পলাশ তাকিয়ে দেখে, সত্যি এখান থেকে মেনগেট টা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
কতগুলো লোক মাথায় করে বাক্সের মতো কি যেন নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে ওরা? [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
একটু খেয়াল করতেই পলাশ দেখে ,ওরা মন্দিরের পিছন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
নন্দিনী বলল, ওরা যাই নিয়ে যাক ,সেটা নিয়ে যাচ্ছে মন্দিরের নীচে আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল সেই মেয়েগুলোকে টানতে টানতে সিকিউরিটি গার্ডের লোকেরা মেন গেটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ততক্ষণে যারা মাথায় করে বাক্সগুলো নিয়ে যাচ্ছিল
তারাও এসে হাত লাগালো সিকিউরিটি গার্ড দের সঙ্গে। তারপর মেয়েগুলোকে প্রায় চ্যাংদোলা করে মেন গেটের বাইরে নিয়ে গেল ।কিছুক্ষণ পরেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেল। নন্দিনী বলল, চোখে দেখেও মেয়েগুলোকে বাঁচাতে পারলাম না। [পূর্ববর্তী পর্ব গুলি পড়ুন ]
পলাশ বলল, আফসোস করিস না, আমাদের মূল লক্ষ্য এখন তোর মাকে আর বিশু মামাকে খুঁজে বের করা ।আর আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে যেমন করে হোক যেতেই হবে আমাদের। দেখতে হবে কি আছে বাকিগুলোতে কি করে যাওয়া যায় বলতো ?
----চলো নিচে নামি ,তারপর ঠিক করা যাবে।
----- ঠিক বলেছিস !
ওরা নিঃশব্দে নিচে নেমে আসে।
Tags
উপন্যাস