উপন্যাস
ভুল স্টেশনে নেমে পঞ্চম কিস্তি
সমীরণ সরকার
বিস্ময় শুরু হয়েছিল অবশ্য মনোজের প্রথম কথা থেকেই।
' কেমন আছিস?' ,' ভালো আছিস তো', 'মাসিমা মেসোমশাই
ভালো আছেন তো?' এই জাতীয় দু'চারটে মামুলি
কথাবার্তার পরেই মনোজ জিজ্ঞাসা করেছিল, "কিরে চাকরি
বাকরি কিছু জোগাড় করতে পারলি?"
এই প্রশ্নটাকেও খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে পলাশ স্বাভাবিক
ভাবেই উত্তর দিয়েছিল, "নারে এখনো পাইনি ,চেষ্টা করছি।"
কিন্তু ঠিক এরপরেই মনোজ যে প্রশ্নটা করেছিল, তাতে পলাশের
বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা ক্ষতটা রক্তাক্ত হয়েছিল।
মনোজ বলেছিল, শুনলাম ,তুই নাকি এম .এ টাও করিস নি ?
----- হ্যাঁ। তুই জানলি কি করে?
----- তুই আমার কোনো খবর রাখিস না বলে আমিও যে তোর
কোন খবর রাখবো না, এটা ঠিক নয়।
---- তুই ,মাস্টার ডিগ্রী কমপ্লিট করেছিস ?
-------- অবশ্যই। ঠিক সময়েই করেছি।
------ কি করছিস এখন?
------ চাকরি।
------ কোথায়? কি চাকরি? কোথায় পোস্টিং তোর?
----- ডব্লিউবিসিএস 'এ' গ্রেড পেয়ে বীরভূমে পোস্টিং । খুব
তাড়াতাড়ি হাওড়া চলে আসছি।
চমকে উঠেছিল পলাশ। চট করে মনে পড়ে গেছিল ,অনেক
বছর আগে মনোজকে বলা এক সিনিয়র ডব্লুবিসিএস
অফিসার তনয়ার শ্লেষোক্তি। তবে কি সেই শ্লেষের জবাব দিতেই
মনোজ ডব্লিউ বিসিএস কমপ্লিট করেছে?
এটা মনোজ এর কেরিয়ারের জন্য নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
কিন্তু যদি সেদিনের ববিতার শ্লেষের জবাব এটা
হয়, তাহলে তো ববিতার এটা জানা দরকার। কে জানে কোথায়
আছে ববিতা? কোন যোগাযোগই তো নেই ওর সঙ্গে।
শুধু ওর সঙ্গে নয়, পুরনো বন্ধুদের কারো সঙ্গেই তো যোগাযোগ
রাখেনি পলাশ। হয়তো নিজের ব্যর্থতাকে গোপন
করার তাগিদেই। কিন্তু আজকে এই মুহূর্তে মনোজের সাফল্যের
কথাটা ববিতাকে জানানোর খুব ইচ্ছে হলো পলাশের।
কেন কে জানে? তবে কি সেদিন ববিতার কথার মধ্যে প্রকাশ
হওয়া দাম্ভিকতার আঁচ শুধু মনোজকে নয়, স্পর্শ
করেছিল তাকেও।
পলাশ তাই ফোনে জিজ্ঞাসা করেছিল মনোজকে," হ্যাঁরে,ববিতার
কোনো খবর রাখিস তুই?"
----- কেনরে, তুইও কি মনে মনে ববিতাকে.....?
------ কি আজেবাজে বলছিস!
হা-হা করে হেসে ওঠেছিল মনোজ।
------ শুধু শুধু হাসছিস কেন? ববিতার কোন খবর কি জানিস তুই?
------ কেন বলতো, ওর সঙ্গে সত্যি কি কোন দরকার আছে তোর?
---- না, সেরকম কিছু নয়, একটা খবর দিতাম ওকে।
----- কোন খবর?
------ তোর সাফল্যের খবর।
----- ও সব জানে।
----- মানে! তাহলে কি ওর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে তোর?
------ আগামী বৈশাখে আমার আর ববিতার বিয়ে। তোর অবশ্যই
আসা চাই। আমি নিজে গিয়ে তোর বাড়িতে আমন্ত্রণ
পত্র দিয়ে আসব। চোখের সামনে ভূত দেখলেও বোধহয় এতটা চমকে
উঠতো না পলাশ যতটা চমকে উঠেছিল মনোজের
কথা শুনে।শ্র
এরপর দু'চারটা মামুলি কথা বার্তার পর ফোনটা ছেড়ে দিয়েছিল
মনোজ।পলাশ অবাক হয়ে অনেকক্ষণ ভেবেছিল, এই অসম্ভবটা সম্ভব
হল কোন যাদু বলে? সেদিনের সেই ববিতা শেষ পর্যন্ত
বিয়ে করছে মনোজকে!
এও কি সম্ভব? অথচ তার জীবন থেকে চিরজীবনের মতো হারিয়ে
গেছে নন্দিনী।নন্দিনী যে এখন কোথায় সেই খবরটাও তো নেই
পলাশের কাছে। কিন্তু কেন যে নন্দিনী তাকে কিছু না বলে হারিয়ে
গেছিল তার জীবন থেকে সেই কারণটা আজও জানে না পলাশ।
বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। এই সময়ে যেমন করে হোক খুঁজে বের করতেই
হবে স্টেশন মাস্টারের ঘর। রিটার্ন
টিকিট কাটতে হবে । তাছাড়া খবর নিতে হবে ফিরতি ট্রেনের ।এদিক
ওদিক তাকিয়ে কোথাও কোনো ঘর বা কোন
মানুষের চিহ্ন দেখতে পায়না পলাশ। কি করবে কিভাবে জানতে পারবে
কোথায় এসে মাস্টারের ঘর এইসব ভাবতে
ভাবতে যখন সে প্রায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে হঠাৎ ঝলসে উঠল
সৌদামিনী । আর সেই মুহূর্তের চোখ ধাঁধানো
আলোতেই সে আবিষ্কার করল বেশ খানিকটা দূরে একটা ছোট্ট ঘর।
একটু ভালো করে নজর করতেই একটা ক্ষীণ
আলোর রেখা চোখে পড়ল পলাশের। ওটা, ওটাই নিশ্চয়ই স্টেশন
মাস্টারের ঘর।পলাশ এগিয়ে চলল আলোর রেখা লক্ষ্য করে।
(চলবে)
Tags
উপন্যাস

