ব্যথার জল
অংশুদেব
০১~১১~২০২০
দোলার সঙ্গে বিভাসের বিয়েটা তিন মাস গড়ায় নি।অবশ্য বিবাহ পূর্ব বৈবাহিক জীবনের অর্ধেক যাপনার পর বাড়ি বদল।বিয়ের পর থেকে অশান্তি নানা ভাবে রেখাপাত করছিল। এদিন মাত্রাটা বেড়ে গিয়ে ছিল।দোলা ঘরে ফ্যান,টিভি চালিয়ে পাশের বাড়িতে খুড়তুতো জায়ের সঙ্গে গল্প করছিল।সে জানত না ওই বাড়ির সঙ্গে এদের অনেককালের দূরত্ব।আর কিভাবেই বা বুঝবে! বিয়ের পর থেকে দেখে আসছে দুই বাড়ির মধ্যে ঢলাঢলি। ও বাড়ির বউটারও বেশিদিন বিয়ে হয়নি।সামনে সরস্বতী পুজো।মন থেকে রঙ এখনো মোছেনি।দুজনেই সোনারপুর এলাকার মেয়ে,বিয়েও হয়েছে সোনারপুরের পাশে।তাই পরামর্শ হচ্ছিল ওই সাজের জিনিস কেনাকাটার।
বিভাসের মা রান্নাঘর সামলাতে আর পারেন না,তবু রান্নাঘর ছাড়বেন না।দোলা কাটাকুটি,ধোয়া পোঁচা শেষ করে সময় থাকলে টিভি দেখে।নয়তো পাশের বাড়ি চলে য়ায় গল্প করতে।তাছাড়া ওরা পরও নয়।আপন ভাই ভাই।
অনেক দিন আগে দেড়ফুট জায়গা বেশি চেয়ে না পাওয়ার সঙ্গে বিভাসের বিয়েতে যৌতুক হিসাবে বাইক না পাওয়া যুক্ত হয়ে ঘোষ গিন্নির মাথা গরম।দোলা বাড়িতে এলে ঝাঁ ঝাঁ করে অনেক কথা শুনিয়ে দিল।সে রান্না বান্না থেকে অপব্যয় সব।সঙ্গে বাইক না কিনতে পারা।
দোলা তবু বার বার বলছিল,মা আমার ভুল হয়ে গেছে।
- রোজ রোজ ভুলটা যে অন্য কথা বলে। রোজগেরে বর পাকড়েছো।এবার ভাগিয়ে নিয়ে বাপের বাড়ি উঠলেই ষোলকলা পূর্ণ হবে।তা ছেলেটা বাইক কিনুক,তখন না হয় যেও।তোমরা তো দেবে না।ছেলেটার সেই ছোটবেলা থেকে সখ।
এই বিষয়ে আরো একদিন কথা উঠেছিল।
দোলার তাই রাগ হল।সে রাগ করে।দুপুরেও খায় না ।রাতে বিভাসও এসে মেজাজ নিল,দোলা, আমাদের বিয়ে তিনমাস এখনো হয়নি।তুমি মার মুখে মুখে তর্ক করলে!
- তর্ক তো নয়!আমি বলেছি,বাইরে যাবার রাস্তাটা ঠিক হলেই হবে।দোলা তার মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল।
বিভাসও তাকিয়ে ছিল।চোখটা ক্রমশ রাঙা হয়ে ওঠে।এক সময় বেশ কড়া ভাষা বলে,তাই তোমার বাবা -
আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
এই প্রথম প্রকৃত ব্যথার জল ধীরে ধীরে দোলার চোখ দিয়ে বের হতে থাকল।
..................
